হঠাৎ অতিরিক্ত তৃষ্ণা লাগা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, অস্বাভাবিক ক্ষুধা, হালকা হাঁটাহাঁটিতে ক্লান্তি অনুভব করা, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া, ক্ষত ধীরে ধীরে শুকানো এবং হাত-পায়ে ঝিনঝিনি বা অবশভাব দেখা—এসব শরীরের স্পষ্ট লক্ষণ যে আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গ হলে দেরি না করে রক্ত পরীক্ষা করানো এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ডাঃ প্রফেসর ফরিদউদ্দিন স্যার-এর রচিত “ডায়াবেটিস চিকিৎসা ও প্রতিকার” বইটি বাংলাদেশের ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স। এই বইটি ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা, প্রতিকার এবং নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে।
কিভাবে বুঝবেন আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত?
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
- অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা
- অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া
- সহজে ক্লান্তি আসা ও দুর্বলতা
- দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া
- ক্ষত বা ঘা দেরিতে শুকানো
- হাত-পায়ে ঝিনঝিনি বা অবশভাব
- দুর্বলতা ও বিরক্তি
উল্লেখিত লক্ষণগুলো দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গ হলে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা করানো জরুরি
| পরীক্ষার নাম | কীভাবে করা হয় | স্বাভাবিক মান | ডায়াবেটিসের নির্দেশক | টিপস / মন্তব্য |
|---|---|---|---|---|
| ফাস্টিং ব্লাড সুগার (FBS) | ৮–১০ ঘণ্টা উপবাসের পর রক্তে শর্করা মাপা | ৭০–৯৯ mg/dL | ≥ ১২৬ mg/dL | রাতে খাবার না খাওয়া অবস্থায় করা উচিত |
| র্যান্ডম ব্লাড সুগার (RBS) | দিনের যে কোনো সময় রক্তে শর্করা মাপা | < ১৪০ mg/dL | ≥ ২০০ mg/dL | উপসর্গসহ হলে এই মান যথেষ্ট সন্দেহজনক |
| ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (OGTT) | ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ পান করানোর পর ২ ঘণ্টা পর রক্ত মাপা | < ১৪০ mg/dL | ≥ ২০০ mg/dL | গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শনাক্তেও ব্যবহৃত হয় |
| HbA1c পরীক্ষা | ২–৩ মাসের গড় রক্তে শর্করা মাপা | < ৫.৭% | ≥ ৬.৫% | নিয়মিত মনিটরিং রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে |
| ইন্সুলিন / সি-পেপটাইড পরীক্ষা | শরীরে ইন্সুলিনের মাত্রা নির্ধারণ | ব্যক্তিভেদে ভিন্ন | কম বা বেশি ইন্সুলিনের মাত্রা ডায়াবেটিস নির্দেশ করতে পারে | টাইপ-১ ও টাইপ-২ পার্থক্য নির্ধারণে ব্যবহার |
| ইউরিন টেস্ট | ইউরিনে শর্করা ও কিটোন পরীক্ষা | শূন্য বা খুব কম | গ্লুকোজ বা কিটোন উপস্থিতি | প্রাথমিক স্ক্রিনিং বা অতিরিক্ত শর্করা চেকের জন্য ব্যবহার |
গর্ভধারণকারী সময় প্রায় ২–১০% মহিলাদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস দেখা যায়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes) হলো সেই ডায়াবেটিস যা শুধুমাত্র গর্ভাবস্থায় শুরু হয় এবং জন্মের পর সাধারণত স্বাভাবিক হয়ে যায়। এটি টাইপ-১ বা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের থেকে আলাদা, তবে ভবিষ্যতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থেকে যায়।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস পরীক্ষার জন্য ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (OGTT) খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। রিপোর্টের মানদণ্ড (WHO/ADA অনুযায়ী) OGTT করার ধাপ, প্রস্তুতি, গ্লুকোজ পান করানো এবং পরবর্তীতে রক্ত পরীক্ষার চার্ট নিম্নে দেয়া হলঃ
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes) পরীক্ষায় OGTT করার ধাপ :
প্রস্তুতি:
- পরীক্ষার আগে অন্তত ৮–১০ ঘণ্টা উপবাসে থাকতে হয় (কেবল পানি খাওয়া যায়)।
- পরীক্ষার আগের ৩ দিন স্বাভাবিক খাবার খেতে হয়।
- উপবাস অবস্থায় রক্তে শর্করার মাত্রা মাপা হয়।
গ্লুকোজ পান করানো:
- রোগীকে ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ ২৫০–৩০০ মি.লি. পানিতে গুলে পান করতে দেওয়া হয়।
- শিশু বা গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে ডোজ কিছুটা ভিন্ন হতে পারে (চিকিৎসকের পরামর্শে)।
পরবর্তী রক্ত পরীক্ষা:
- গ্লুকোজ পান করার পর সাধারণত ২ ঘণ্টা পর রক্তে শর্করা মাপা হয়।
- কিছু ক্ষেত্রে ১ ঘণ্টা ও ২ ঘণ্টা দু’বার পরীক্ষা করা হয়।
| পরীক্ষা | স্বাভাবিক মান | প্রিডায়াবেটিস | ডায়াবেটিস |
|---|---|---|---|
| FBS (উপবাসে) | < 100 mg/dL | 100–125 mg/dL | ≥ 126 mg/dL |
| OGTT (২ ঘণ্টা পর) | < 140 mg/dL | 140–199 mg/dL | ≥ 200 mg/dL |
“ডায়াবেটিস চিকিৎসা ও প্রতিকার” বইটিতে ডায়াবেটিস রোগীদের সুস্থতায় যে সকল ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেঃ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU)-এর এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. ফরিদউদ্দিন রচিত “ডায়াবেটিস চিকিৎসা ও প্রতিকার” বইটিতে ডায়াবেটিস রোগীদের সুস্থতায় যে সকল ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেঃ
- ডায়াবেটিস এবং ডায়াবেটিসের জটিলতা ।
- ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষাসমূহ।
- ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম ।
- ডায়াবেটিস ও ওষুধ ।
- বিশেষ অবস্থায় ডায়াবেটিসের চিকিৎসা।
- দিয়াবেটিসের প্রতিকার ।